সন্তানের বিয়ের দায়িত্ব কার?

একজন মানুষ যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার পর বিয়ের জন্য আলাদা ও সুনির্দিষ্ট কোন বয়ঃসীমা নেই। কেননা, মানুষের দৈহিক গঠন, শারীরিক সক্ষমতা, জৈবিক চাহিদা ও ক্রিয়াকলাপ পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতি ও জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। তাই ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় নারী-পুরুষের নারিত্ব ও পুরুষত্ব বিকশিত হওয়ার বয়সকালও ভিন্নতর হয়ে থাকে। কাজেই বিয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো বয়স নয় বরং প্রবল যৌনানুভূতি জাগ্রত হওয়ার সময়টিকেই ভিত্তি বানানো উচিত।
.
এখন কথা হলো, এই বয়সে পৌঁছার পরও যদি বিয়ের ব্যয়ভার এবং স্ত্রীর ভরণপোষণের সার্বিক ব্যবস্থা সম্পন্ন করা সম্ভবপর না হয়; অথবা সার্বিক প্রস্তুতি সত্ত্বেও উপযুক্ত পাত্রপাত্রী পাওয়া না যায়—তখন ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কর্তব্য কী?
.
এক্ষেত্রে ব্যক্তির কর্তব্য হলো, ধৈর্যধারণ করা এবং নিজেকে এই বলে প্রবোধ দেওয়া যে, দুনিয়ায় সবকিছু চাওয়ামাত্রই পাওয়া যায় না। তাছাড়া কদাচিৎ পাওয়া গেলেও সম্পূর্ণ মনঃপূত হয় না।
.
অধিকন্তু ধৈর্যধারণ ও সংযম পালনও মানুষের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে তার আত্মিক যে উন্নতি সাধিত হয়, যথেচ্ছা ভোগের মাধ্যমে তা কিছুতেই অর্জিত হয় না। কুরআনের বাণী—
.
‘আর যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম পালন করে। [সুরা নূর, আয়াত: ৩৩]
.
হাদীস শরীফে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের ব্যয়ভার বহনে অক্ষম ব্যক্তিদের করণীয় নির্দেশ করে বলেছেন—
.
“হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্য হতে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, এটা দৃষ্টিকে অবনত রাখতে সাহায্য করে, লজ্জাস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। আর যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা, এটা যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত রাখে। [সহীহ বুখারী : ১৯০৫, সহীহ মুসলিম : ১৪০০]
.
বিশিষ্ট মনীষী ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন— ‘প্রথমে জ্ঞানার্জন করো এরপর হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন করো তারপর বিয়ে করো।’ [কিতাবুল ওসিইয়্যাত, বিবাহ-অধ্যায়, ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ]
.
কাজেই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সংকট অথবা যুক্তিগ্রাহ্য কোনো কারণে বিয়ে করা সম্ভবপর না হলে বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির সংযম-অভ্যাস করাই একান্ত কর্তব্য।
.
অনুরূপ পরিবার ও অভিভাবকদের কর্তব্য হলো বিয়ের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতাকে আরও উদার ও উন্নত করা। একজন শিক্ষিত পুত্রবধূ বা জামাতা সংসারের বোঝা নয়; বরং অনাগত বংশধরের উপযুক্ত মা-বাবাও। কাজেই তাদের জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণের অর্থই হলো আপন বংশধারার প্রতি কল্যাণ কামনা করা। উপরন্তু সন্তান যদি অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও সার্বিক বিচারে সৎ ও যোগ্য হয় তাহলে মহান আল্লাহ তাদেরকে বিয়ে করানোর নির্দেশ দিয়ে মা-বাবা ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন—
.
‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তাদেরকে বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও।’ [সূরা নূর, আয়াত : ৩২]
.
শুধু তাই নয়; অভিভাবক যদি সস্তানের অভাব সত্ত্বেও তাদেরকে বিয়ে করায় তাহলে স্বয়ং আল্লাহ আপন অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন। কুরআনে কারীমের ঘোষণা—
.
‘তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ তাদেরকে আপন অনুগ্রহে অভাবমুক্ত (ও সচ্ছল) করে দেবেন। আর আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ [সূরা নূর, আয়াত : ৩২]
.
অধিকন্তু একজন মুমিন হিসেবে হৃদয়ের গভীরে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। বর্ণিত হয়েছে—
.
‘পৃথিবীতে বিচরণশীল প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ গ্রহণ করেছেন’ [সুরা হুদ, আয়াত : ০৬]
.
সুতরাং বাহ্যিকভাবে পরিবারের কর্তাব্যক্তি অধীনদের জীবিকার জন্য দৌড়ঝাঁপ করলেও বাস্তবে আল্লাহই সেই বুদ্ধি, দক্ষতা ও উপায় সৃষ্টি করে দেন।
.
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে—
.
‘তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সমস্ত কিছু আকাশে রয়েছে’ [সূরা যারিয়াত, আয়াত : ৫৮]
.
কাজেই সন্তান যদি সৎ ও যোগ্য হয় এবং তাদের বিয়ের অপরিহার্যতা দেখা দেয় তাহলে তাদেরকে বিয়ে করানোই অভিভাবকের একান্ত কর্তব্য। তারা এই কর্তব্যটি সুচারুরূপে পালন করলে মহান আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। তাদেরকে আপন অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করবেন এবং কাঙ্ক্ষিত সচ্ছলতা দান করবেন।
.
— আকরাম হোসাইন রচিত ’সন্তান স্বপ্ন দিয়ে বোনা’ বইয়ের চয়িতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *