যে প্রতিনিয়ত শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে, সারা রাত জেগে থাকে, ঘুমিয়ে পড়ে ফজরের সালাত না পড়েই। প্রবৃত্তি-পূজারীদের সাথে যার গলায় গলায় ভাব, যাকে ঘিরে ধরেছে পাপাচারের অন্ধকার। যে জায়েয কাজগুলোতেই এমন মত্ত হয়ে গেছে যে, সে মত্ততা তাকে হারাম পর্যন্ত নিয়ে ছেড়েছে।
সে কীভাবে অনুতপ্ত হতে পারে!
যে বারংবার একই গুনাহ করতে থাকে, তা সত্ত্বেও তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা কাজ করে না। যার অন্তর থেকে মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা বিদায় নিয়েছে, ফলে জঘন্য পাপের ব্যাপারেও সে কোনো পরোয়া করে না। গীবত যেন তার মুখের মধু, ঘুম যেন তার প্রধান কাজ। ঘুমে সে এতটাই বিভোর যে সময়মতো সালাতও পড়তে পারে না।
সে লোক কীভাবে তাওবাকারী হতে পারে!
যে চক্ষুকে সংযত করে না, অবিরত চোখ বুলিয়ে নেয় নিষিদ্ধ জিনিসে।
সে কীভাবে তাওবাকারী হতে পারে!
যে নিজের কৃত গুনাহের জন্য দুঃখ-ভারাক্রান্ত নয়। বরং তা দেখিয়ে বেড়াতে ভালোবাসে, এমনকি গর্বও করে!
সে কীভাবে তাওবাকারী হতে পারে!
যে বারংবার আল্লাহর সাথে আনুগত্যের ওয়াদা করে, অতঃপর বিশ্বাসঘাতকতা
সে কীভাবে তাওবাকারী হতে পারে!
যে মনে করে, তাওবা কেবল কবিরা গুনাহগারদের জন্য প্রযোজ্য, তারাই একমাত্র আল্লাহর অসন্তুষ্টির ঝুঁকিতে আছে! তার অভিধানে কবিরা গুনাহগার হচ্ছে শুধুতারাই যারা মদ খায় ও ব্যভিচার করে, এছাড়া বাকি গুনাহগারদের অপরাধ সহজেই ক্ষমার যোগ্য। অথচ সে এটা ভুলে যায়, অবিরত সগিরা গুনাহ করতে থাকাও কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত এবং এটাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির কারণ। আগুনের লেলিহান শিখা তো সামান্য অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকেই বিস্তার লাভ করে।
সে কীভাবে তাওবাকারী হতে পারে!
যে পাপী লোকদের পছন্দ করে, পছন্দ করে জালিমের পৃষ্ঠপোষকদের। যার সঙ্গী নির্বাচিত হয় প্রভাব-প্রতিপত্তির বিচারে, দ্বীনের ভিত্তিতে নয়।
আল্লাহর কাছে তাদের এই মিছে তাওবা নিতান্তই অর্থহীন।
শয়তান তাদের নিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসে আর আনন্দিত হয়, কারণ ভ্রষ্টতাকে সে তাদের সামনে সুশোভিত করে রাখতে পেরেছে। অথচ তাদের ধারণা, তারা কত উত্তম কাজই না করছে।
তারা যদি রবের সাথে সাক্ষাতের আগেই তাওবার অর্থটা জানত। যে ঈমানের দাবি তারা করছে, তা যদি সঠিক অর্থে বাস্তবায়িত করত। যদি এখনো আসমান থেকে ওহির ধারা অব্যাহত থাকত, তবে তাদের ব্যাপারেই এই আয়াতটি অবতীর্ণ হতো—
‘হে নবি, (তাদেরকে) আপনি বলুন, তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করোনি, বরং তোমরা বলো, আমরা বাহ্যত বশ্যতা স্বীকার করেছি’ (আল-হুজুরাত: আয়াত-১৪)
ঘুম থেকে জেগে ওঠার এখনই সময় আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হবার এখনই সুযোগ। মহান আল্লাহ সবাইকে রহম করুন।
.
জিলহজের মহিমাপূর্ণ ১০ দিনের ওপর রচিত ‘জিলহজের উপহার‘ বইয়ের অংশবিশেষ।