এক নারী শয়তানের প্ররােচনায় ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়েছিল। এরপর অনুশােচনার আগুনে জ্বলতে থাকে তার হৃদয়। বিবেক ও অন্তরের দংশন আর্তচিৎকার হয়ে বেরিয়ে আসে আল্লাহর রাসুলের সামনে—‘আমি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি, আমাকে পবিত্র করুন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!’
.
রহমতের নবি ভালাে করেই জানেন, ব্যভিচার থেকে পবিত্রতার অর্থ হলাে পাথর মেরে হত্যা করা। এটাই শরিয়ত-নির্ধারিত শাস্তি। নবিজি চাইছিলেন এই স্বীকারােক্তি প্রকাশিত না হােক। তার ইচ্ছা, নারীটি যেন নিজের গােপন গুনাহের জঞ্জালটি আপন নীরব তাওবায় মিটিয়ে নেয়, নিজের ব্যাপারে এমন অভিযােগ প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে সে অপরাধ স্বীকারের সময় নবিজি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেন, যেন তিনি কিছুই শােনেননি।
.
কিন্তু নারীটি ভীষণ নাছােড়বান্দা। অনুশােচনার যে আগুন তার হৃদয়ে জ্বলছে, তা নির্বাপনে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ক্ষণে ক্ষণে যে আর্তচিৎকার তার ভেতরটাকে নারকীয় অনুভূতি দান করছে, তা না থামিয়ে ফিরে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। অন্যপাশে গিয়ে আবার সে আবেদন করে- ‘আমি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি, আমাকে পবিত্র করুন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!’
.
নবিজি দূরে কোথাও তাকিয়ে থাকেন অন্যমনষ্ক ভঙ্গিতে। যেন স্ত্রীলােকটি পালিয়ে বাঁচতে পারে, অথবা সে যেন সংবিৎ ফিরে পায়, নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জন মানেই তাে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া।
.
কিন্তু সে তার অবস্থানে অনড়। বার বার আওড়াতে থাকে—’ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি ব্যভিচার করেছি, আমার গর্ভে ব্যভিচারের কলঙ্কিত চিহ্ন। অনুগ্রহ করে আমাকে পবিত্র করে দিন।’
.
দীর্ঘসময় পর আল্লাহর রাসুল তার কথা শুনতে রাজি হন, স্ত্রীলােকটি তার অপরাধের বিবরণ পেশ করে। সব শুনে রাসুলুল্লাহ তাকে আরেকটি বার শাস্তি থেকে পরিত্রাণের সুযোগ করে দেওয়ার ইচ্ছা করেন; হয়তাে সে নিজের অপরাধ আড়াল করে শাস্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা করবে। তাকে বলেন, ‘তুমি এখন চলে যাও। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর এসাে।
.
দয়ার নবি ভেবেছিলেন, পাপবােধ ও অনুতাপের যে আগুন তার হৃদয়কে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিচ্ছে, তা নির্বাপিত হওয়ার জন্য হয়তাে ৯ মাসই যথেষ্ট। ততদিনে হয়তাে প্রশমিত হয়ে যাবে তার অন্তর্দাহ, হয়তাে নিজেকে গােপন করে সে হারিয়ে যাবে শত চেনা-অচেনা মানুষের ভিড়ে। আর আপন রবের কাছে অনুতাপের অশ্রু নিবেদন করে মুছে ফেলবে গুনাহর সমস্ত কালিমা।
.
নির্ধারিত সময় শেষ হলাে। মহিলাটি রাসুলুল্লাহর দরবারে ঠিক ৯ মাস পর এসে হাজির। কোলে তার নবজাতক শিশু। আল্লাহর রাসুল তাকে আবার ফিরিয়ে দেন। পূর্বের চেয়েও বেশি সময় ধার্য করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘যাও, সন্তানকে দুধ ছাড়ানাের পর এসাে।’
.
তারমানে আল্লাহর রাসুল তাকে আরও দুই বছরের সময় বেঁধে দিলেন। দয়ালু নবির ইচ্ছা, গুনাহগার হতভাগী এই মা যেন তার শিশুসন্তানের সাথে হেসে খেলে আনন্দে বেঁচে থাকে, কৃত অপরাধের কথা ভুলে গিয়ে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে। কিন্তু তার পাপবােধ ছিল এই দীর্ঘ দু-বছরের চেয়েও অধিক শক্তিশালী। তার মাতৃত্বের অনুভূতি অনেক দুর্বল হয়ে গিয়েছিল হৃদয়ে জ্বলতে থাকা অপরাধবােধের কাছে। ফলে দুই বছর বাদে, অর্থাৎ শিশুসন্তানের দুধ ছাড়ানাের পর স্ট্রীলােকটি আবার ফিরে আসে। এইবার নবিজি তার ওপর শরিয়তের নির্ধারিত শাস্তি কার্যকর করেন।
.
এই নারী যে আত্মিক সংকট ও পীড়নের মধ্যে দিনাতিপাত করছিল, তাকে দয়ার চাদরে ঢেকে নেওয়ার জন্য, অপরাধবােধের যাতনায় কাতর নির্মল হৃদয়টির যন্ত্রণা প্রশমনের জন্য রাহমাতুল্লিল আলামিন, বিশ্বজনীন করুণা ও রহমতস্বরূপ রাসুলুল্লাহর কী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
.
একমাত্র সত্য জীবনদর্শনের শেষ নবি এমন দয়া ও করুণা তার পবিত্র মনে ধারণ করতেন, সেই জীবনাদর্শকেই বর্তমান সময়ে বর্বর আখ্যা দেওয়া হয়! বলা হয়, তিনিই নাকি হত্যা, ধ্বংস ও রক্তপাতের সংস্কৃতি চালু করেছেন! নিঃসন্দেহে এটা এমন নির্জলা মিথ্যাচার, যার ওপর আর কোনাে মিথ্যা হয় না। এটা এমন অন্যায়, যা সমস্ত অন্যায়কেই ছাপিয়ে যায়।
.
‘তিনিই আমার প্রণের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বইয়ের কিয়দাংশ।
Month: September 2021
সন্তানের বিয়ের দায়িত্ব কার?
একজন মানুষ যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার পর বিয়ের জন্য আলাদা ও সুনির্দিষ্ট কোন বয়ঃসীমা নেই। কেননা, মানুষের দৈহিক গঠন, শারীরিক সক্ষমতা, জৈবিক চাহিদা ও ক্রিয়াকলাপ পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতি ও জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। তাই ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় নারী-পুরুষের নারিত্ব ও পুরুষত্ব বিকশিত হওয়ার বয়সকালও ভিন্নতর হয়ে থাকে। কাজেই বিয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো বয়স নয় বরং প্রবল যৌনানুভূতি জাগ্রত হওয়ার সময়টিকেই ভিত্তি বানানো উচিত।
.
এখন কথা হলো, এই বয়সে পৌঁছার পরও যদি বিয়ের ব্যয়ভার এবং স্ত্রীর ভরণপোষণের সার্বিক ব্যবস্থা সম্পন্ন করা সম্ভবপর না হয়; অথবা সার্বিক প্রস্তুতি সত্ত্বেও উপযুক্ত পাত্রপাত্রী পাওয়া না যায়—তখন ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কর্তব্য কী?
.
এক্ষেত্রে ব্যক্তির কর্তব্য হলো, ধৈর্যধারণ করা এবং নিজেকে এই বলে প্রবোধ দেওয়া যে, দুনিয়ায় সবকিছু চাওয়ামাত্রই পাওয়া যায় না। তাছাড়া কদাচিৎ পাওয়া গেলেও সম্পূর্ণ মনঃপূত হয় না।
.
অধিকন্তু ধৈর্যধারণ ও সংযম পালনও মানুষের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে তার আত্মিক যে উন্নতি সাধিত হয়, যথেচ্ছা ভোগের মাধ্যমে তা কিছুতেই অর্জিত হয় না। কুরআনের বাণী—
.
‘আর যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম পালন করে। [সুরা নূর, আয়াত: ৩৩]
.
হাদীস শরীফে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের ব্যয়ভার বহনে অক্ষম ব্যক্তিদের করণীয় নির্দেশ করে বলেছেন—
.
“হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্য হতে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, এটা দৃষ্টিকে অবনত রাখতে সাহায্য করে, লজ্জাস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। আর যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা, এটা যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত রাখে। [সহীহ বুখারী : ১৯০৫, সহীহ মুসলিম : ১৪০০]
.
বিশিষ্ট মনীষী ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন— ‘প্রথমে জ্ঞানার্জন করো এরপর হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন করো তারপর বিয়ে করো।’ [কিতাবুল ওসিইয়্যাত, বিবাহ-অধ্যায়, ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ]
.
কাজেই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সংকট অথবা যুক্তিগ্রাহ্য কোনো কারণে বিয়ে করা সম্ভবপর না হলে বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির সংযম-অভ্যাস করাই একান্ত কর্তব্য।
.
অনুরূপ পরিবার ও অভিভাবকদের কর্তব্য হলো বিয়ের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতাকে আরও উদার ও উন্নত করা। একজন শিক্ষিত পুত্রবধূ বা জামাতা সংসারের বোঝা নয়; বরং অনাগত বংশধরের উপযুক্ত মা-বাবাও। কাজেই তাদের জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণের অর্থই হলো আপন বংশধারার প্রতি কল্যাণ কামনা করা। উপরন্তু সন্তান যদি অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও সার্বিক বিচারে সৎ ও যোগ্য হয় তাহলে মহান আল্লাহ তাদেরকে বিয়ে করানোর নির্দেশ দিয়ে মা-বাবা ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন—
.
‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তাদেরকে বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও।’ [সূরা নূর, আয়াত : ৩২]
.
শুধু তাই নয়; অভিভাবক যদি সস্তানের অভাব সত্ত্বেও তাদেরকে বিয়ে করায় তাহলে স্বয়ং আল্লাহ আপন অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন। কুরআনে কারীমের ঘোষণা—
.
‘তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ তাদেরকে আপন অনুগ্রহে অভাবমুক্ত (ও সচ্ছল) করে দেবেন। আর আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ [সূরা নূর, আয়াত : ৩২]
.
অধিকন্তু একজন মুমিন হিসেবে হৃদয়ের গভীরে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। বর্ণিত হয়েছে—
.
‘পৃথিবীতে বিচরণশীল প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ গ্রহণ করেছেন’ [সুরা হুদ, আয়াত : ০৬]
.
সুতরাং বাহ্যিকভাবে পরিবারের কর্তাব্যক্তি অধীনদের জীবিকার জন্য দৌড়ঝাঁপ করলেও বাস্তবে আল্লাহই সেই বুদ্ধি, দক্ষতা ও উপায় সৃষ্টি করে দেন।
.
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে—
.
‘তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সমস্ত কিছু আকাশে রয়েছে’ [সূরা যারিয়াত, আয়াত : ৫৮]
.
কাজেই সন্তান যদি সৎ ও যোগ্য হয় এবং তাদের বিয়ের অপরিহার্যতা দেখা দেয় তাহলে তাদেরকে বিয়ে করানোই অভিভাবকের একান্ত কর্তব্য। তারা এই কর্তব্যটি সুচারুরূপে পালন করলে মহান আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। তাদেরকে আপন অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করবেন এবং কাঙ্ক্ষিত সচ্ছলতা দান করবেন।
.
— আকরাম হোসাইন রচিত ’সন্তান স্বপ্ন দিয়ে বোনা’ বইয়ের চয়িতাংশ।
নির্জন ও জনমানবহীন এলাকায় তিনজনের কমে ভ্রমণ নয়
প্রশ্ন: সফর করার সময় কি সর্বনিম্ন তিনজন থাকা জরুরি?
উত্তর: মানবতার সবচেয়ে কল্যাণকামী বন্ধু ও পথপ্রদর্শক প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনজনের কমে ভ্রমণ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এ মর্মে নিন্মে দুটি হাদিস তুলে ধরা হল:
* আমর ইবনে শু‘আইব রা. থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ، وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ، وَالثَّلَاثَةُ رَكْبٌ
“একাকী সফরকারী হচ্ছে একটি শয়তান, আর একত্রে দু’ জন সফরকারী দু’টি শয়তান। তবে একত্রে তিনজন সফরকারীই হচ্ছে প্রকৃত কাফেলা।”
(সুনান আবু দাউদ (তাহকিককৃত) অধ্যায়ঃ ৯/ জিহাদ (كتاب الجهاد), পরিচ্ছদঃ একাকী সফর করা, হাদিস নম্বরঃ [2607]
এখানে ‘শয়তান’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নাফরমান বা অবাধ্য। (ইবনে খুযাইমা রহ.)
* ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي الْوَحْدَةِ مَا أَعْلَمُ مَا سَارَ رَاكِبٌ بِلَيْلٍ وَحْدَهُ
“যদি লোকেরা একা সফরে কী ক্ষতি আছে তা জানত, যা আমি জানি, তবে কোন আরোহী রাতে একাকী সফর করত না।”
(সহিহ বুখারী, অধ্যায়: জিহাদ, অধ্যায়: নিঃসঙ্গ ভ্রমণ, হা/২৯৯৮)
এ সকল হাদিসের আলোকে আলেমগণ বিজন মরু প্রান্তর বা নির্জন পথ দিয়ে একান্ত বাধ্য না হলে এক বা দু ব্যক্তির ভ্রমণকে অ পছন্দনীয় বলেছেন। কেননা এতে তার/তাদের নানা সমস্যা, ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপদাপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে শয়তানের চক্রান্তে ফেঁসে যাওয়ার ও বিপথগামী হওয়ার। বিশেষ করে রাতের বলায় বিপদের আশঙ্কা আরও বেশি থাকে। তবে তিন বা ততোধিক ব্যক্তির একসাথে ভ্রমণ তুলনা মূলক নিরাপদ। অবশ্য একান্ত জরুরি হলে অর্থাৎ যদি সফর সঙ্গী না পাওয়া যায় তাহলে ভিন্ন কথা।
◈ বর্তমান যুগের ভ্রমণ এবং হাদিসের প্রয়োগ:
বর্তমান যুগে যে সব রাস্তায় প্রচুর মানুষ বা যানবাহন চলাচল করে অথবা যে সকল যানবাহনে একসাথে অনেক মানুষ থাকে (যেমন: বাস, রেল, উড়োজাহাজ, পানি জাহাজ ইত্যাদি) সে ক্ষেত্রে একাকী বা দুজন একসাথে ভ্রমণ করা উক্ত হাদিসের আওতায় পড়বে না। কারণ, তা মূলত: নি:সঙ্গ ভ্রমন নয়। এ সব পথে চলাচলের সময় মানুষ বিপদে পড়লে সাধারণত: অন্যান্য মানুষ ও রাস্তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ইত্যাদি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে।
আধুনিক যুগে শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন:
” ولعل الحديث أراد السفر في الصحارى والفلوات التي قلما يرى المسافر فيها أحدا من الناس ، فلا يدخل فيها السفر اليوم في الطرق المعبدة الكثيرة المواصلات . والله أعلم ” انتهى
“সম্ভবত: হাদিসের উদ্দেশ্য হল, মরু প্রান্তর বা নির্জন পথে ভ্রমণ করা-যেখানে একজন ভ্রমণকারী খুব কমই অন্য কাউকে দেখতে পায়। সুতরাং বর্তমানে ব্যাপক জনবহুল ও প্রচুর যানবাহন চলাচল করে এমন পথ দিয়ে ভ্রমণ করা এর আওতাভুক্ত নয়। আল্লাহু আ’লাম-আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।” (সিলসিলা সহিহাহ)
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রহ. সহ অনেক আধুনিক যুগের আলেম প্রায় একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আল্লাহু আলাম।
—————-
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব